উত্তরাঞ্চল Archives - স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র https://www.ulipur.com/?tag=উত্তরাঞ্চল কুড়িগ্রাম জেলার তথ্য ও সংবাদ Sat, 04 Mar 2023 07:10:16 +0000 en-US hourly 1 https://www.ulipur.com/wp-content/uploads/2022/10/1665889308.png উত্তরাঞ্চল Archives - স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র https://www.ulipur.com/?tag=উত্তরাঞ্চল 32 32 ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু হলে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির https://www.ulipur.com/?p=22872 Sat, 04 Mar 2023 07:10:15 +0000 https://www.ulipur.com/?p=22872 ।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।কুড়িগ্রাম জেলায় মোট নয়টি উপজেলা রয়েছে। তার মধ্যে রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলা ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা কুড়িগ্রামসহ অন্যান্য উপজেলা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে রাজীবপুর ঘাট থেকে চিলমারী নৌ-বন্দর পর্যন্ত যেতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা লাগলেও শুষ্ক মৌসুমে লাগে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টা। শুধু তাই নয় শীত ও শুষ্ক মৌসুমে [...]

The post ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু হলে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
কুড়িগ্রাম জেলায় মোট নয়টি উপজেলা রয়েছে। তার মধ্যে রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলা ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা কুড়িগ্রামসহ অন্যান্য উপজেলা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে রাজীবপুর ঘাট থেকে চিলমারী নৌ-বন্দর পর্যন্ত যেতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা লাগলেও শুষ্ক মৌসুমে লাগে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টা। শুধু তাই নয় শীত ও শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকট, ঘন কুয়াশা ও নদীর রেখা পরিবর্তনের কারণে চিলমারী নৌ বন্দর পর্যন্ত পৌঁছতে পাঁচ-আট ঘন্টা পর্যন্তও লেগে যায়। কখনো কুয়াশার কারণে ভুল পথে চলে নৌকা। শুষ্ক মৌসুমে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বাধাগ্রস্ত হয় নৌকা। যাতায়ত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় রাজীবপুর উপজেলা কুড়িগ্রাম জেলার মধ্যে দারিদ্রতার দিক থেকে প্রথমের সারিতে অবস্থান করছে।

দেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, রাজিবপুর উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস। দারিদ্র্যের হার ৭৯.৮ শতাংশ। এই উপজেলায় জনসংখ্যা প্রায় ৮৫ হাজার। অন্তত ৩০-৪০ টি চর রয়েছে। এসব চরের বাসিন্দারের বেশিরভাগ হতদরিদ্র। এমন কিছু পরিবার রয়েছে যারা ২০ থেকে ৩০ বারের অধিক নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে সর্ব শান্ত হয়েছে। অন্যদিকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রৌমারী। এ উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ৭৬. ৪ শতাংশ। কুড়িগ্রাম শহরের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ক্লান্তিহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ দুই উপজেলার চার লক্ষাধিক মানুষকে। কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থার জটিলতার কারণে জরুরী রোগী ও প্রসূতিদের উপযুক্ত চিকিৎসা মেলে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চলখ্যাত রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না।

নৌ-রুটে পণ্য পরিবহন ও যাত্রী পারাপারের ব্যাপক ভোগান্তি। ঝুঁকি নিয়ে নৌ-রুটে চলছে নৌ-যান। এতে করে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী,মুমূর্ষ রোগী, মামলার বাদী বিবাদী, চাকুরীজীবী ও কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর হলেও জেলা সদরের সাথে সড়ক পথে যোগাযোগ স্থাপন হয়নি এই দুই উপজেলার। বিভিন্ন কারণে নৌ-রুট গুলোতে জনসাধারণের জন্য স্পিডবোট কিংবা অন্যান্য দ্রুতগামী যানবাহনের ব্যবস্থা পর্যন্তও নেই এই নৌ-রুটে।

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন, ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থা, নদীভাঙ্গন ও বেকারত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। কুড়িগ্রামের সদর থেকে রৌমারী ও রাজিবপুরের দূরত্ব ৬৩ কিলোমিটারের বেশি। এর মধ্যে ২৬ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা নদীপথ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রভাষক আব্দুস সবুর ফারুকী জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় অঞ্চলটি ছিল সর্বদা মুক্ত। পাক হানাদার বাহিনীর পদচারনা এখানে না থাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের কোন দোষরাও ছিল না। সোজা কথায় এখানে রাজাকার আল-বদর দালালদের জন্ম হয়নি। এই এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি একটি মাত্র সেতু। যার মাধ্যমে সমৃদ্ধি হবে এলাকার অর্থনৈতিক জীবন যাত্রা। উত্তরাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ স্থাপন হবে একটি সেতুর মাধ্যমে। অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে বেকারত্ব হ্রাস পাবে।

সংগঠক ও সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম জানান, একটি সেতুর অভাবে উন্নত চিকিৎসা,ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ,কৃষি, শিক্ষাসহ নানা কাজে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এ জনপদের মানুষ। সেতু নির্মাণ হলে মানুষের দুর্ভোগ শেষ হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে দরিদ্র এলাকার মানুষজন এগিয়ে যাবে। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, ব্রহ্মপুত্র নদের উপর একটি সেতু বাস্তবায়ন করার।

স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চল ছিলো রাজীবপুর ও রৌমারী। এখানে ৬৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং নিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এটি নির্মাণ হলে বঙ্গবন্ধু সেতুতে চাপ অনেক কম যাবে। হাজারও মানুষের কর্মসংস্থান হবে,বেকারত্ব কমবে। এতে কুড়িগ্রামসহ দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।

//নিউজ/রাজিবপুর//সুজন-মাহমুদ/মার্চ/০৪/২৩

The post ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু হলে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
ডাক অধিদপ্তরে ৫৭ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ https://www.ulipur.com/?p=15308 Thu, 11 Nov 2021 11:37:38 +0000 https://www.ulipur.com/?p=15308 ডাক অধিদপ্তরের অধীনে পোস্টমাস্টার জেনারেলের কার্যালয়, উত্তরাঞ্চল রাজশাহীতে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মোট ৮টি বিষয়ে ৫৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। পদ: ড্রেসারপদের সংখ্যাঃ ০১ টিবেতন গ্রেডঃ ১৬বেতন স্কেলঃ ৯৩০০-২২৪৯০/- পদ: পোস্টম্যানপদের সংখ্যাঃ ৩০ টিবেতন গ্রেডঃ ১৭বেতন স্কেল ৯০০০-২১৮০০/- পদ: প্যাকার কাম মেইল ক্যারিয়ারপদের সংখ্যাঃ ১২টিবেতন গ্রেডঃ ১৯বেতন স্কেল ৮৫০০-২০৫৭০/- পদ: অফিস [...]

The post ডাক অধিদপ্তরে ৫৭ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
ডাক অধিদপ্তরের অধীনে পোস্টমাস্টার জেনারেলের কার্যালয়, উত্তরাঞ্চল রাজশাহীতে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে।

সম্প্রতি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মোট ৮টি বিষয়ে ৫৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

পদ: ড্রেসার
পদের সংখ্যাঃ ০১ টি
বেতন গ্রেডঃ ১৬
বেতন স্কেলঃ ৯৩০০-২২৪৯০/-

পদ: পোস্টম্যান
পদের সংখ্যাঃ ৩০ টি
বেতন গ্রেডঃ ১৭
বেতন স্কেল ৯০০০-২১৮০০/-

পদ: প্যাকার কাম মেইল ক্যারিয়ার
পদের সংখ্যাঃ ১২টি
বেতন গ্রেডঃ ১৯
বেতন স্কেল ৮৫০০-২০৫৭০/-

পদ: অফিস সহায়ক
পদের সংখ্যাঃ ০২টি
বেতন গ্রেডঃ ২০
বেতন স্কেল ৮২৫০-২০০১০/-

পদ: নিরাপত্তা প্রহরী
পদের সংখ্যাঃ ০৩টি
বেতন গ্রেডঃ ২০
বেতন স্কেল ৮২৫০-২০০১০/-

প্রার্থীর বয়স: ২০২০ সালের ২৫ মার্চে ১৮ থেকে ৩০ বছর। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রতিবন্ধী প্রার্থীর ক্ষেত্রে বয়স সর্বোচ্চ ৩২ বছর। কর্মস্থল হবে রাজশাহী।

আবেদন সময়: আগামী ১৭ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে ৭ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

আবেদন নিয়ম: আগ্রহীরা www.pmgnc.teletalk.com.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।

ডাক অধিদপ্তরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখুন

The post ডাক অধিদপ্তরে ৫৭ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্য : উন্নয়নের ভ্রান্ত ডিসকোর্স https://www.ulipur.com/?p=7033 Wed, 03 Oct 2018 15:13:26 +0000 https://www.ulipur.com/?p=7033 মো. মোরশেদ হোসেন: বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্য হতে পারে অর্থনীতির আলোচনায় নতুন ডিসকোর্স। দেশ ও অঞ্চলভেদে দারিদ্র্যের রয়েছে নানা স্বরূপ। বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণ নিয়ে কাজ করছে সরকার, বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বড় বড় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা, অর্থনীতিবিদ, সমাজবিদ, মানবতাবাদী কর্মী, এনজিওগুলো। ফলাফল হিসেবে কমছে দারিদ্র্য। বাংলাদেশের বিভিন্ন সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপের উচ্চদারিদ্র্য রেখা অনুসারে [...]

The post উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্য : উন্নয়নের ভ্রান্ত ডিসকোর্স appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
মো. মোরশেদ হোসেন:
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্য হতে পারে অর্থনীতির আলোচনায় নতুন ডিসকোর্স। দেশ ও অঞ্চলভেদে দারিদ্র্যের রয়েছে নানা স্বরূপ। বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণ নিয়ে কাজ করছে সরকার, বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বড় বড় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা, অর্থনীতিবিদ, সমাজবিদ, মানবতাবাদী কর্মী, এনজিওগুলো। ফলাফল হিসেবে কমছে দারিদ্র্য। বাংলাদেশের বিভিন্ন সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপের উচ্চদারিদ্র্য রেখা অনুসারে বাংলাদেশে যে দারিদ্র্যের হার ২০০০, ২০০৫ ও ২০১০ সালে ছিল যথাক্রমে ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ, ৪০ শতাংশ ও ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ, তা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অক্টোবর ২০১৭-এ প্রকাশিত Preliminary Report on Household Income and Expenditure Survey 2016 অনুসারে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। আবার একই পরিসংখ্যান অনুসারে জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্য হার যেখানে উচ্চদারিদ্র্য রেখা অনুসারে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ, সেখানে সব বিভাগের মধ্যে রংপুর বিভাগে দারিদ্র্য হার সবচেয়ে বেশি ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ। উল্লেখ্য, Household Income and Expenditure Survey 2010 অনুযায়ী রংপুর বিভাগে ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ। দেশের জাতীয় দারিদ্র্য হার যেখানে কমছে, সেখানে রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক বিষয় এবং পরিসংখ্যানটা চমকে দেয়ার মতো। জেলাভিত্তিক দারিদ্র্য পরিসংখ্যান আরো ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য সীমাভুক্ত ১০টি জেলার মধ্যে পাঁচটি উত্তরাঞ্চলের। এর মধ্যে কুড়িগ্রামে দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ, ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ। একটি জেলার ৭০ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, ভাবতেই অবাক লাগে। কিন্তু এর চেয়ে বেশি অবাক হতে হয় ২০১৪ সালে বিবিএস যে দারিদ্র্য মানচিত্র তৈরি করে, তাতে কুড়িগ্রামে দারিদ্র্যের হার ছিল ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ অর্থাৎ বেড়েছে দারিদ্র্য।

দারিদ্র্য বাড়ার বিষয়টা জন্ম দেয় নানা প্রশ্নের। এটা কি জরিপের কোনো সীমাবদ্ধতা, নাকি বাস্তবে এটা ঘটেছে। যদি বাস্তবে এটা ঘটে থাকে, তাহলে দেশের ৭ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলসের সফল বাস্তবায়ন, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন, সোস্যাল সেফটি নেটের কার্যক্রম, স্বাধীনতা পূর্ব ও পরবর্তী সময় থেকে দেশী-বিদেশী এনজিওর এত দিনের কার্যক্রম, সরকারের এত মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তর-দপ্তর-বিভাগের কার্যক্রম, সবই কি নিষ্ফল? সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে, বেড়েছে এ অঞ্চলের মানুষের আয়, মঙ্গার প্রকোপ নেই, রাস্তা-ব্রিজ- হয়েছে অনেক, বেড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, বেড়েছে মানুষের সচেতনতা, শিক্ষার হার। তার পরও কেন এই চিত্র?

বাস্তবতা বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে দেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে সুফল, তা উত্তরাঞ্চলের জনগণ খুব বেশি পায়নি অর্থাৎ প্রবৃদ্ধির সমবণ্টন হয়নি। বাংলাদেশের Accelerating Growth, Empowering Citizens শীর্ষক সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০১৬-২০২০) ‘‘Addressing the Challenge of Lagging Regions’’ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন হয়েছে, তা বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ হয়নি। ফলে দুটো ভিন্ন ধরনের অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে— পশ্চাত্পদ অঞ্চল এবং অপেক্ষাকৃত সমৃদ্ধশালী অঞ্চল। এ অঞ্চলগুলোকে বঞ্চিত এলাকা এবং অবঞ্চিত এলাকা হিসেবেও দেখানো হয়েছে।

উত্তরাঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা কর্মসংস্থানের অভাব। কৃষি ছাড়া দৃশ্যমান কোনো খাত সৃষ্টি হয়নি, যেখানে মানুষ কাজ করে আয় করতে পারে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিতে জড়িত বেশির ভাগ মানুষ। ফলে ছদ্মবেশী বেকারত্ব অনেক বেশি অর্থাৎ এদের কৃষিতে প্রান্তিক উৎপাদন শূন্য। বড় বা মাঝারি শিল্প এ অঞ্চলে নেই বললে চলে। উত্তরাঞ্চলে কৃষিতে মজুরি বেড়েছে সত্য। কিন্তু সেই সঙ্গে অনেক বেড়েছে দ্রব্যমূল্য। নিত্যদিন পরিশ্রম করে যে আয়, তাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে পারে না পরিবারগুলো। বেশি পরিশ্রম, স্বাস্থ্য ঝুকি, পুষ্টির অভাবে অল্প সময়ে হারায় কর্মক্ষমতা। শুধু কায়িক পরিশ্রম করে স্বল্প মজুরিতে দারিদ্র্যের বৃত্ত ভাঙা সম্ভব কিনা, তা ভাবার বিষয়। উত্তরাঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু পরিবেশ বিপর্যয়। বিশেষ করে বন্যা, নদীভাঙন প্রতি বছরই এ অঞ্চলের মানুষকে করছে দরিদ্র। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনা মানুষকে করে বাস্তুহারা। পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার হয়েও কেউ পায় না ক্লাইমেট চেঞ্জ ফান্ডের ক্ষতিপূরণ কিংবা কোনো সরকারি সহায়তা। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি স্থায়ীভাবে দারিদ্র্য দূরীকরণে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। অপ্রতুল আর্থিক কিংবা খাদ্য সহায়তা তাদের সপ্তাহ বা মাসের খাদ্য জোগান দিলেও দারিদ্র্য দূরীকরণ অসম্ভব। আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ড এতে সম্ভব নয়। ফলে স্থায়ীভাবে দারিদ্র্যের একটি সিলমোহর তাদের গায়ে লেগে যায়। এ থেকে উত্তরণ প্রচেষ্টা দেখা যায় না।

দেশের যে জেলাগুলোয় খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী দারিদ্র্য কম, তার অন্যতম হলো নারায়ণগঞ্জ জেলা। এখানে দারিদ্র্যের হার মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এখানকার বৈশিষ্ট্য হলো এটি শিল্প এলাকা। কিন্তু উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় বিড়ি, চালকল ইত্যাদি ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো শিল্পায়ন হয়নি। রংপুর অঞ্চলে শিল্পায়নে বাধার অন্যতম কারণ হলো জ্বালানি সমস্যা, পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ না থাকা। উত্তরা ইপিজেডে বিদেশী বিনিয়োগকারী না আসার কারণ হলো গ্যাস সরবরাহ না থাকা। দেখা যায়, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অনেক শিল্পমালিক উত্তরাঞ্চলের। কিন্তু তারা উত্তরাঞ্চলে শিল্প স্থাপনে আগ্রহী হয় না। কারণ হিসেবে উত্তরাঞ্চলের বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকা, জ্বালানি হিসেবে গ্যাস, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, অবকাঠামোগত সুবিধা, দক্ষ শ্রমিক না থাকা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ইত্যাদি নানা অসুবিধার কথা বলেন। এছাড়া এ অঞ্চলের মানুষ ব্যবসায়িক ঝুঁকি গ্রহণে অনেকটা বিমুখ। উত্তরাঞ্চলে দেশী-বিদেশী এনজিওর কর্মকাণ্ড আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। স্বাধীনতাপূর্ব ও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে এ অঞ্চলে বিশেষ করে কুড়িগ্রামের জনগণের দারিদ্র্য হ্রাসে তারা নানা কর্মকাণ্ড করেছে। কিন্তু এত বছর পরও এ অঞ্চলে সর্বোচ্চ দারিদ্র্য এবং দারিদ্র্য বৃদ্ধি তাদের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকাণ্ডের ব্যর্থতাকে সামনে নিয়ে আসে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এনজিওগুলোর ক্ষুদ্রঋণের উচ্চ সুদের হারের কারণে অনেক মানুষ ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এক এনজিওর ঋণ শোধ করতে আরেক এনজিও থেকে ঋণ নিচ্ছে। ফলে ঋণের চক্র হতে বের হতে পারছে না তারা।

উত্তরাঞ্চলের কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে (বয়স ১৫ বা এর বেশি) ৮৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ পুরুষ শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ করে কিন্তু নারীদের মধ্যে মাত্র ৩৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ করে (বিবিএস ২০১১)। রংপুর বিভাগ হতে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের হারও কম। ২০০৫ হতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিদেশে মোট কর্মসংস্থান হওয়া ১ কোটি ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৮ জনের মধ্যে রংপুর বিভাগ হতে বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৭ হাজার ৫৭৪ জনের অর্থাৎ ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আবার বিএমইটির পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০১৬ সালে যেখানে মোট রেমিট্যান্সের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের অর্জন ৪১ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ঢাকা বিভাগের অর্জন ৩০ দশমিক ৯৮ শতাংশ, সেখানে রংপুর বিভাগের অর্জন মাত্র দশমিক ৮৫ শতাংশ। রংপুর বিভাগে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও এখনো নারী শিক্ষার হারে পিছিয়ে আছে (৪৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ)। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বলতে যা বোঝায়, এখনো শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষায় নিট এনরোলমেন্ট বেশি হলেও ড্রপ আউট বেশি। মাধ্যমিক ক্ষেত্রে এনরোলমেন্ট কম। টারশিয়ারি পর্যায়ে এনরোলমেন্ট আরো কম। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে মানসম্পন্ন স্কুল কম থাকায় অভাব রয়েছে মানসম্পন্ন শিক্ষার। আর্থিক কারণ, প্রয়োজনীয় সুযোগ- সুবিধার অভাব, ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা, প্রতিকূল পরিবেশ ইত্যাদি কারণে উচ্চশিক্ষায় এ অঞ্চলের জনগণ অনেক পিছিয়ে। স্বাস্থ্যসেবার আপাত উন্নয়ন হলেও কমিউনিটি ক্লিনিক প্রাথমিক চাহিদা মেটালেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের প্রয়োজনে মানুষকে ছুটতে হয় রংপুর শহরের মেডিকেল কলেজ কিংবা প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডাক্তারদের চেম্বারে। সরকারি হাসপাতালে অপ্রতুল সেবা, স্বল্প অর্থ বরাদ্দ, প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্টের অভাব, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবই এর মূল কারণ।

দারিদ্র্য, লৈঙ্গিক সমতা ও নারী ক্ষমতায়নের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। আবার নারী দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে বহুমাত্রিকতা। রংপুর বিভাগের দরিদ্রের মধ্যে নারীরা নারী হিসেবে বেশি দারিদ্র্যের শিকার। বিশেষ করে চরাঞ্চলের হতদরিদ্র নারীদের জীবনকথা যেন বঞ্চনা আর দীর্ঘশ্বাসের শোকগাথা। ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা-ধরলা-যমুনা তীরে যে জনপদ; চরপ্রধান গ্রাম, যেখানে ৬৮ শতাংশ মানুষ ভূমিহীন, কর্ম-খাদ্য সংকট সেখানেই। আজ হয়তো মঙ্গা নেই কিংবা কমে গেছে, কিন্তু চরাঞ্চলের জনগণের স্থায়ী কর্মসংস্থান হয়নি।

পশ্চাত্পদতা দূরীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো মানবসম্পদ উন্নয়ন। এ অঞ্চলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাস করতে গুণগত শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নের কৌশল হিসেবে পশ্চাত্পদ অঞ্চলে টারশিয়ারি পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে উৎসাহিত করতে হবে। টারশিয়ারি পর্যায়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে রংপুর বিভাগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র দুটি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় একটি, কারিগরি শিক্ষার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। যেসব চরাঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই, সেখানে বিদ্যালয় স্থাপন করা প্রয়োজন। এছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন ও মেয়েদের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে।

রংপুর বিভাগ হতে শ্রমিক অভিবাসনের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। রেমিট্যান্সকে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে। রংপুর বিভাগ হতে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে অধিক সংখ্যক লোক পাঠাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য বিশেষ দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি এবং ঋণ সহায়তা কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে দক্ষতা চাহিদা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পশ্চাত্পদ অঞ্চলে বিশেষ প্রযুক্তি ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। পশ্চাত্পদ অঞ্চলের সম্ভাব্য মাইগ্রেন্টদের সহায়তার জন্য বিশেষ আর্থিক সহায়তা স্কিম পরিচালনা করতে হবে। পশ্চাত্পদ অঞ্চলে বেসরকারি সহায়তা নিয়ে ফরেন ইমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে সম্ভাব্য মাইগ্রেন্টদের লজিস্টিক সহায়তা এবং কারিগরি পরামর্শ দেয়া যেতে পারে। এ অঞ্চলের বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাড়িয়ে প্রবাসী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।

পশ্চাত্পদ রংপুর বিভাগে অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির জন্য মূল প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়ন। এর জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে রংপুর অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। যোগাযোগ ও যাতায়াতের সময় কমিয়ে আনতে হবে। জ্বালানি সমস্যা দূরীকরণে এখানে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। গ্যাস সরবরাহ না হওয়া পর্যন্ত ফার্নেস অয়েল ও বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রদান প্রয়োজন। রংপুর অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত স্থাপন করতে হবে। রংপুর বিভাগে আইটি পার্ক স্থাপন করতে হবে। আইটি পার্ক, আইসিটি সহায়তা, ইনকিউবেশন সেন্টার হলে শিক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। রংপুর অঞ্চলের শিল্পের বিকাশে শিল্প স্থাপন-সংক্রান্ত ব্যাংকঋণ সহজসাধ্য করতে হবে।

‘ইকুইটি’ ও ‘কোল্যাটারাল সিকিউরিটি’র পরিবর্তে আবেদনকারীর সামাজিক ব্যাকগ্রাউন্ড বা পটভূমি ও প্রকল্পটি অর্থনৈতিকভাবে টেকসই কিনা, তা বিবেচনায় ঋণ প্রদান করা। প্রকল্প ও চলতি মূলধনের জন্য সুদের হার ১ ডিজিট করা প্রয়োজন। দ্রুত ঋণ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া এবং অর্থ ছাড় করা। টিআইএন ও ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা ও তা বাস্তবায়ন করা। ভ্যাটের পরিধি বিস্তৃত করা এ অঞ্চলে বিনিয়োগ সহায়তা দিতে আলাদা শিল্পনীতি, করনীতি, ভ্যাট নীতি, শুল্কনীতি ও ঋণনীতি ঘোষণা করতে হবে। রংপুর অঞ্চলের শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষজ্ঞ ও আইসিটির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ অঞ্চলের শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের জন্য শিল্প সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ করতে হবে। শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির ওপর কাস্টমস শুল্ক কম ধরা। শিল্পের প্রাথমিক উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট হার কমানো। রংপুর অঞ্চলের শিল্পের ট্যাক্স হলিডের মেয়াদ ১০ বছর করা। শিল্পের জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি। এজন্য বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজমেন্ট সৃষ্টি করতে হবে। দুর্নীতি দূর করা এবং গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে পণ্যের উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ, মান উন্নয়ন, মার্কেটিং পলিসি নির্ধারণ, বিজ্ঞাপন প্রচার ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। ট্রেডিং খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি শিল্প ও সেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ অঞ্চলে বেসরকারি খাত বিনিয়োগে উৎসাহিত না হলে প্রথম দিকে সরকারি সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। এখানে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুবিধাসহ ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপন করতে হবে, যাতে উদ্যোক্তারা সুবিধা পান। প্রয়োজন রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা ও এডিপিতে বাজেট বরাদ্দ রাখা এবং রংপুর ওয়াসা গঠন করা ও এডিপিতে বাজেট বরাদ্দ রাখা, যা এসডিজিকে ত্বরান্বিত করবে। রংপুর বিভাগে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, অকৃষি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। রংপুর অঞ্চলে অকৃষিমূলক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা বাড়াতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান যেমন— ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করতে হবে, যাতে সরকারের গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচি সফল হয়। এ অঞ্চলের পরিবর্তনের লক্ষ্যে ডিজিটাল সুবিধা প্রাপ্তির জন্য ইন্টারনেট, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মডেম, রাউটার ইত্যাদির ভ্যাট কমানো প্রয়োজন। প্রাইভেট সফটওয়্যার পার্কের ট্যাক্স হলিডে ২০ বছর করা প্রয়োজন। সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প তৈরিতে করহার শূন্য করা প্রয়োজন। ই-কমার্সের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার এবং যেসব সফটওয়্যার বাংলাদেশে তৈরি হয়, তা আমদানিতে ২৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা প্রয়োজন। বন্যা, নদীভাঙন ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য নদীতে প্রয়োজন ড্রেজিং।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করার কৌশল ও নীতি হলো ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোর উন্নয়নের জন্য নিয়মিত এডিপির অতিরিক্ত একটি নির্দিষ্ট শতাংশীয় হারে গ্রহণযোগ্য এডিপির বরাদ্দ দেয়া’। পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে রংপুর বিভাগে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে বিনিয়োগ সুবিধা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি উপযোগ অভিগম্যতা, সেবায় অভিগম্যতা বাড়াতে হবে। রংপুর বিভাগের প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন— কয়লা সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। বঞ্চিত এলাকায় বেশি পরিমাণ সরকারি ব্যয় করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও পরিমাণ বাড়ানো উচিত। নিম্ন আয় ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য উৎপাদনশীল সম্পদের ওপর মালিকানা এবং আয়-বর্ধনমূলক কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।

বাংলাদেশের বিভাগগুলোর মধ্যে রংপুর বিভাগ সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার, দারিদ্র্য বৃদ্ধি এ অঞ্চলের নতুন বিষয়। অনেক সভা, সেমিনার, লেখালেখি ও আলোচনা হওয়ার পরও উন্নয়ন বৈষম্য দূরীকরণে সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই। তার ওপর বাড়ছে দারিদ্র্য। এখন দারিদ্র্য বৃদ্ধি রোধে প্রয়োজন সরকারের একটি উন্নয়নের রোডম্যাপ তৈরি এবং তা বাস্তবায়নে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, অর্থনীতি বিভাগ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

সুত্র:বণিক বার্তা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৮

The post উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্য : উন্নয়নের ভ্রান্ত ডিসকোর্স appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল কুড়িগ্রামের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে https://www.ulipur.com/?p=5267 Sat, 20 Jan 2018 17:39:56 +0000 http://www.ulipur.com/?p=5267 নিউজ ডেস্ক: ভারতের আসামসহ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় শনিবার সকালে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম সীমান্তের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে। শনিবার সকাল ৭টা ১৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল আসামের গৌরীপুরে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। এর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে [...]

The post ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল কুড়িগ্রামের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
নিউজ ডেস্ক:
ভারতের আসামসহ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় শনিবার সকালে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম সীমান্তের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে।

শনিবার সকাল ৭টা ১৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল আসামের গৌরীপুরে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। এর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৬।
গৌরীপুর কুড়িগ্রাম সীমান্তের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে, কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে স্থানটির দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার।
কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে আসামের বিভিন্ন এলাকায় ভূকম্পন অনুভূত হয়। আসামসহ জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে ৫ সেকেন্ড স্থায়ী কম্পন অনুভূত হয়। তবে ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

এ ছাড়া বাংলাদেশের রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও নীলফামারীসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্রের ওয়ারলেস সুপারভাইজার মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলসংলগ্ন ভারতীয় কিছু এলাকাতেও এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বাংলাদেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাটে ভূমিকম্প হয়েছে।
এদিকে সকালের প্রচণ্ড শীতে কম্পনের সময় লোকজন ঘুমিয়ে থাকায় জনসাধারণের মাঝে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়নি।
তবে সকালে রাস্তায় বেরিয়ে আসা ও জেগে থাকা মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেককে বাড়িঘর ছেড়ে খোলা জায়গায় যেতে দেখা যায়।

এ সময় বন্ধ হয়ে যায় মোবাইল নেটওয়ার্ক।

সুত্র:যুগান্তর,২০ জানুয়ারি ২০১৮

The post ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল কুড়িগ্রামের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
নাব্যতা হারাচ্ছে তিস্তা নদী https://www.ulipur.com/?p=3374 Sun, 12 Mar 2017 11:28:40 +0000 http://www.ulipur.com/?p=3374 আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে —- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই ‘আমাদের ছোট নদী’ কবিতার সাথে মিলে গেছে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার নদীর চিত্র। তবে তা বৈশাখে নয়, মাঘ মাসেই তিস্তা নদীতে এখন হাঁটু পানি। পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায় তিস্তা। উলিপুর উপজেলার ভৌগলিক সীমানার মধ্যে যে কয়েকটি নদী আছে তার [...]

The post নাব্যতা হারাচ্ছে তিস্তা নদী appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে,

বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে

—- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই ‘আমাদের ছোট নদী’ কবিতার সাথে মিলে গেছে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার নদীর চিত্র। তবে তা বৈশাখে নয়, মাঘ মাসেই তিস্তা নদীতে এখন হাঁটু পানি। পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায় তিস্তা। উলিপুর উপজেলার ভৌগলিক সীমানার মধ্যে যে কয়েকটি নদী আছে তার মধ্যে তিস্তা নদী অন্যতম। সিকিমের পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে তিস্তা নদী ভারতের জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ডিমলা অঞলে প্রবেশ করেছে।সৈন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি এই তিস্তা নদী।বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল তথা আমাদের এই উলিপুর উপজেলার অনেক  অনেকাংশে জুরে আছে  তিস্তা নদী ।  দিনে দিনে নাব্যতা হারাচ্ছে এই নদীটি।বিভিন্ন স্থানে বাধ নির্মান কিংবা বর্জ্য অপসারনের অভাবে নদীটির পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।যার কারনে বছরের অধিকাংশ সময় শুকনা থাকছে নদীটি।উত্তরাঞ্চলের কৃষির প্রাণভোমরা এ তিস্তা নদীর এই পরিণতি স্থানীয় পরিবাশের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।স্থানীয় জেলেদের পোহাতে হচ্ছে চরম দূ্র্ভোগ।এছাড়া পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের জেলেরা। নদীতে আর আগের মতো মাছ না থাকায় পেশা বদল করে অন্য পেশায় পারি জমাচ্ছেন এই মৎস্যজীবীরা। অন্যদিকে, উজানে ভারত ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মাণ করে তিস্তার প্রাকৃতিক প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করছে। একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার ফলে বাংলাদেশের ১১২ মাইল দীর্ঘ এই নদীটি শুকিয়ে এখন মৃতপ্রায়। নদীর চারিদিকে শুধু চর আর চর। ভরা মৌসুমে নৌকায় করে নদীটি পার হতে সময় লাগত মাত্র ১০ মিনিট।কিন্তু শুকনা মৌসুমে পায়ে হেটে পার হতে সময় লাগছে ৩০ মিনিটেরও বেশি।নির্মল বাতাস আর নদীর কলকল ধ্বনি এখন দুর্লভ বললেই চলে।সঠিক উদ্যোগ আর জনসচেতনতার অভাবে বুড়ি তিস্তা কিংবা মরা তিস্তার পরিণতি আমাদের অনেকেরই জানা।বর্তমান তিস্তা এখনও সম্পুর্নরূপে হারিয়ে যায় নি।সঠিক উদ্যোগ আর জনসচেতনতাই পারে নদীটির নাব্যতা  ফিরিয়ে আনতে ।তবেই অনেকাংশে রক্ষিত হবে প্রকৃতির ভারসাম্য।

লেখক :আতিক মেসবাহ লগ্ন

The post নাব্যতা হারাচ্ছে তিস্তা নদী appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>