Kurigram District Archives - স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র https://www.ulipur.com/?tag=kurigram-district কুড়িগ্রাম জেলার তথ্য ও সংবাদ Sat, 24 Nov 2018 12:58:03 +0000 en-US hourly 1 https://www.ulipur.com/wp-content/uploads/2022/10/1665889308.png Kurigram District Archives - স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র https://www.ulipur.com/?tag=kurigram-district 32 32 কুড়িগ্রাম জেলার নামকরণ হয় যেভাবে https://www.ulipur.com/?p=7345 Sat, 24 Nov 2018 12:55:13 +0000 https://www.ulipur.com/?p=7345 ।। নিউজ ডেস্ক ।। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনের বাংলাদেশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, দৃষ্টিনন্দন জীবনাচার মন কাড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ ও মিনার, নদী, পাহাড়, অরণ্যসহ হাজারও সুন্দরের রেশ ছড়িয়ে আছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। দেশের আট বিভাগে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও [...]

The post কুড়িগ্রাম জেলার নামকরণ হয় যেভাবে appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
।। নিউজ ডেস্ক ।।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনের বাংলাদেশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, দৃষ্টিনন্দন জীবনাচার মন কাড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ ও মিনার, নদী, পাহাড়, অরণ্যসহ হাজারও সুন্দরের রেশ ছড়িয়ে আছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত।

দেশের আট বিভাগে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ) ৬৪ জেলা। প্রতিটি জেলার নামকরণের সঙ্গে রয়েছে ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। এসব ঘটনা ভ্রমণপিপাসু উৎসুক মনকে আকর্ষণ করে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রাম জনপদ বেশ প্রাচীন। এ অঞ্চলে আর্যরা আসার আগে বাস করতো অনার্যরা। প্রাগৈতিহাসিক যুগে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় গড়ে ওঠা মানব সমাজের আদি অধিবাসী তারাই। ১৯৮৪ সালের ২৩ জানুয়ারি মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হয় কুড়িগ্রাম।

কুড়িগ্রামের নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানান মতবাদ। অনেকে মনে করেন, কুড়িটি পরিবার অথবা অনার্যদের গণনার পদ্ধতি কুড়ি থেকে কুড়িগাঁও ও কুড়িগঞ্জ হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে কুড়িগ্রাম নাম ধারণ করে। কুড়ি শব্দটি অনার্য। এখনও গ্রামবাংলায় কুড়ি হিসেবে গোনার পদ্ধতি চালু রয়েছে। কারও মতে, রঙ্গপুর রাজার অবকাশযাপনের স্থান ছিল কুড়িগ্রাম। প্রচুর বন-জঙ্গল ও ফলমূলে পরিপূর্ণ ছিল এই এলাকা। তাই ফুলের কুঁড়ি থেকে এর নাম হয়েছে কুড়িগ্রাম।

চান্দামারী মসজিদ

ভাওয়াইয়া গান কুড়িগ্রাম জেলার প্রাণ। এখানে মানুষের জীবনের সঙ্গে মিশে আছে ভাওয়াইয়া গানের সুর। হাজারও ভাওয়াইয়া গানের চারণভূমি এই জেলা। এখানকার মানুষের মুখের ভাষা ও হৃদস্পন্দনে অনুরণিত হয়ে চলেছে ভাওয়াইয়া গান। এ জেলার ওপর দিয়ে বহমান ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ফুলকুমারসহ ১৬টি নদ-নদী ভাওয়াইয়া গানের উৎস। বেশিরভাগ ভাওয়াইয়া গানে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদীর কথা উঠে এসেছে। নদ-নদীময় প্রকৃতি ও সমৃদ্ধ ভাওয়াইয়া গানের সুবাদে এ জেলা পরিণত হয়েছে ঐতিহ্যময় সাংস্কৃতিক লীলাভূমিতে। জেলার ব্র্যান্ডিং স্লোগান হলো—‘ভাওয়াইয়া গানের ধাম, নদ-নদীময় কুড়িগ্রাম।’

কুড়িগ্রামের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় আছে চান্দামারী মসজিদ, মেকুরটারি শাহী মসজিদ, চণ্ডী মন্দির, দোলমঞ্চ মন্দির, ভেতরবন্দ জমিদার বাড়ি, চিলমারী বন্দর, বীর প্রতীক তারামন বিবির বাড়ি ও সংলগ্ন স্থান, হলোখানা ইউনিয়নে ধরলা নদীর তীরে, মোগলবাসা ভাটলার স্লুইসগেট, ধরলা ব্রিজের পাড়-পিকনিক স্পট, ঘোগাদহ বাজার।

সূত্রঃ banglatribune

The post কুড়িগ্রাম জেলার নামকরণ হয় যেভাবে appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
কুড়িগ্রামের উন্নয়ন বৈষম্য দূর হবে কবে? https://www.ulipur.com/?p=4719 Wed, 08 Nov 2017 14:27:45 +0000 http://www.ulipur.com/?p=4719 মো. মাসুদ রানা: বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। এদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, জিডিপির হার বেড়েছে কিন্তু কুড়িগ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান এখনো বাড়েনি। কোনো একটি অঞ্চলের মানুষকে অভুক্ত, দারিদ্র্যের মধ্যে রেখে যদি শত শত প্রকল্পের উদ্বোধন ও বাস্তবায়ন করা হয় তবে আমি সেটাকে উন্নয়ন বলে মনে করি না। আমরা যেখানে খাওয়ার জন্য [...]

The post কুড়িগ্রামের উন্নয়ন বৈষম্য দূর হবে কবে? appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
মো. মাসুদ রানা:
বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। এদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, জিডিপির হার বেড়েছে কিন্তু কুড়িগ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান এখনো বাড়েনি। কোনো একটি অঞ্চলের মানুষকে অভুক্ত, দারিদ্র্যের মধ্যে রেখে যদি শত শত প্রকল্পের উদ্বোধন ও বাস্তবায়ন করা হয় তবে আমি সেটাকে উন্নয়ন বলে মনে করি না। আমরা যেখানে খাওয়ার জন্য ভাত পাই না সেখানে কার গাড়ি কেনার স্বপ্ন দেখাটা দুঃস্বপ্ন।

কুড়িগ্রাম জেলার উন্নয়নের পথে এই জেলার নদ-নদীগুলো বর্তমানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট্ট জেলাটির ভিতর দিয়ে প্রায় ২০টি নদী বয়ে গেছে। প্রতিবছর অনেক বড় বড় বন্যা এসে এই জেলার মানুষের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করে চলে যায়। সারা বছর ভালোভাবে চলার জন্য যে ফসলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় তাদের, সেই ফসল বন্যায় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে খেয়ে না খেয়ে তাদের জীবনযাপন করতে হয়। বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার পরও যেটুকু ফসল রয়ে যায়, তার উপযুক্ত মূল্য কৃষকরা পায় না। ফলস্বরূপ, তাদের ফসল উত্পাদনে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়। বন্যার সঙ্গে যোগ দেয় নদী ভাঙন, হারাতে হয় তাদের বাস্তুভিটা ও আবাদি জমি। সবকিছু হারিয়ে বসবাস করতে হয় ঠিক উদ্বাস্তুদের মতো।

কুড়িগ্রামে কোনো বড় ধরনের শিল্প-কারখানা নেই। আর শিল্প-কারখানা একটি এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থান অনেক উপরে নিয়ে যায়। নারায়ণগঞ্জ কলকারখানা-শিল্পসমৃদ্ধ এ বলেই দেশের সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষ সেখানে বসবাস করে।

শিক্ষাক্ষেত্রে কুড়িগ্রাম জেলা অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ (সূত্র : বিবিএস জরিপ -২০১৭) কিন্তু কুড়িগ্রামে সাক্ষরতার হার মাত্র ৩৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। অধিকাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর হওয়াতে এখানে সবচেয়ে বেশি বাল্য বিবাহ সংঘটিত হয়। ইউনিসেফ-এর মতে (২০১৪) এই সংখ্যা বাংলাদেশে ৬৬ শতাংশ হলেও কুড়িগ্রামে ৭৮ শতাংশ। আর এই শিক্ষার হার কম হওয়াটাও কুড়িগ্রামের মানুষের দরিদ্রতার অন্যতম কারণ।

তবে আশার কথা হলো যে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামে এসে বেশ কয়েকটি উন্নয়নমুখী কার্যক্রমের ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে কুড়িগ্রামে কলকারখানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টি করা, কুড়িগ্রামে সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা, কৃষিতে উন্নয়নের জন্য নদীতে ড্রেজিং করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির সঙ্গে লালমনিরহাটের যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য দ্বিতীয় ধরলা সেতু নির্মাণসহ (সেতুটির কাজ শেষের পথে) সর্বমোট ১৬টি প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছেন যা নিঃসন্দেহে কুড়িগ্রাম জেলার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এসব প্রকল্প অতিদ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি যদি এর সঙ্গে আরো বেশকিছু উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হাতে নিয়ে বাস্তবায়ন করা হয় তবে হয়ত-বা কুড়িগ্রাম থেকে মঙ্গা চিরতরে হারিয়ে যাবে। কার্যক্রমগুলো হলো :

এক. বর্তমান সরকার চিলমারী-সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে দ্বিতীয় তিস্তা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন এবং বর্তমানে এর কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। এই সেতুর মূল নকশায় যদি রেলপথ যুক্ত করা হয় এবং তা যদি প্রস্তাবিত ফুলছড়ি-দেওয়ানগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত টানেলে যোগ করা হয় তবে চিলমারী থেকে ঢাকার দূরুত্ব প্রায় ২০০ কি.মি. কমে যাবে। এর ফলে কুড়িগ্রামের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং এ জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে। দুই. চিলমারী নৌ-বন্দরের কাজ দ্রুত সম্পাদন করা এবং এটিকে পুনরায় চালু করা। তিন. কুড়িগ্রামে বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না করে সরকারি উদ্যোগে স্থাপন করা। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কুড়িগ্রামের গরিব মেধাবী ছাত্ররা টাকার অভাবে পড়তে পারবে না। যেহেতু কুড়িগ্রাম জেলাটি কৃষিপ্রধান জেলা, তাই সেখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করাটাই সবচেয়ে বেশি যুক্তিযুক্ত হবে। তাহলে জেলার কৃষি উন্নয়ন খুব দ্রুত ত্বরান্বিত হবে। চার. পর্যটকদের জন্য নদী কেন্দ্রিক দর্শনীয় স্থান গড়ে তোলা। পাঁচ. কুড়িগ্রামে প্রায় চার শতাধিক চর রয়েছে। এসবের উন্নয়ন ব্যতীত কুড়িগ্রামের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই চরের উন্নয়নে বিশেষ বাজেট প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ছয়. দীর্ঘ ৬৮ বছরের ছিটমহল নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ সকল নাগরিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা জানি আপনি কুড়িগ্রামের উন্নয়নে কতটা আন্তরিক। তাই আপনার ওপর আমরা বিশ্বাস রেখেছি। আশা করি আপনি কুড়িগ্রামের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও এই জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুব দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করে কুড়িগ্রাম জেলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন। সেই সুন্দর হাসিটা হাসার অপেক্ষায় রইলাম।
লেখক : শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সুত্র:ইত্তেফাক

The post কুড়িগ্রামের উন্নয়ন বৈষম্য দূর হবে কবে? appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
চিকিৎসক সংকটে ভেঙে পড়ছে কুড়িগ্রামের স্বাস্থ্যসেবা https://www.ulipur.com/?p=4716 Wed, 08 Nov 2017 14:04:06 +0000 http://www.ulipur.com/?p=4716 বাদশাহ্ সৈকত: কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় ভয়াবহ চিকিৎসক সংকট চলছে। প্রতিদিনই সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে শত শত মানুষকে। অনেকে বাড়তি খরচ করে রংপরে চিকিৎসা নিতে গেলেও অধিকাংশ মানুষ গ্রাম্য হাতুড়ে চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে এ জেলার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে ১৫৯টি [...]

The post চিকিৎসক সংকটে ভেঙে পড়ছে কুড়িগ্রামের স্বাস্থ্যসেবা appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
বাদশাহ্ সৈকত:
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় ভয়াবহ চিকিৎসক সংকট চলছে। প্রতিদিনই সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে শত শত মানুষকে। অনেকে বাড়তি খরচ করে রংপরে চিকিৎসা নিতে গেলেও অধিকাংশ মানুষ গ্রাম্য হাতুড়ে চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে এ জেলার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে ১৫৯টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ১১৬টিই শূন্য। নয়টি উপজেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা চলছে মাত্র ৪৩ জন চিকিৎসক দিয়ে। এ অবস্থায় দেশের সীমান্তঘেঁষা দারিদ্র্র্যপীড়িত এ জেলার মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবার মৌলিক অধিকার ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

বেশি চিকিৎসক সংকট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয়। ফলে প্রায় ২০ লাখ মানুষের একমাত্র ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল। কিন্তু সেখানেও রয়েছে চিকিৎসক ও লোকবল সংকট। তার ওপর পুরো জেলার রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে পুরো ব্যবস্থাই ভেঙে পড়ার দশা। সদর হাসপতালে ৪২ জন চিকিৎসকের বিপরীতে বর্তমানে আছেন মাত্র ১৪ জন। ২১ জন কনসালট্যান্টের পদ থাকলেও রয়েছেন নয়জন এবং মেডিকেল অফিসার ১৮ জনের বিপরীতে আছেন মাত্র দুজন। এছাড়া চক্ষু, নাক-কান-গলা এবং চর্ম ও যৌন বিভাগে চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।

অন্যদিকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় ১৯টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন তিন থেকে চারজন। এর মধ্যে ফুলবাড়ী ও রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলছে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়াই।

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহিনুর রহমান সরদার জানান, সদর হাসপাতালে প্রতিদিন অন্তঃবিভাগে আড়াইশ ও বহিঃবিভাগে এক হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা দেয়ার মতো সব উপকরণ থাকলেও চিকিৎসক সংকটের কারণে বিপুলসংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সদর হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবু তাহের মো. আনোয়ারুল হক অভিযোগ করে বলেন, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি বারবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে অবহিত করার পরও নতুন করে চিকিৎসক পদায়ন না করে উল্টো সদর হাসপাতাল থেকে পাঁচজন চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে।

চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। যাত্রাপুর ইউনিয়নের রোগীর স্বজন শাহিদা বেগম জানান, তিন বছরের শিশু সাজিদকে দেখানোর জন্য টিকিট কেটেছিলেন, কিন্তু ডাক্তার দেখাতে পারেননি। ডাক্তারের চেম্বারের সামনে দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরও রোগীর চাপে ভেতরে যেতে পারেননি। এখন গ্রামের ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা করাচ্ছেন। সদর হাসপাতালে আসা বেশির ভাগ রোগী ও স্বজনরা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় চিকিৎসা না পেয়ে সদর হাসপাতালে এলেও তাদের কোনো লাভ হচ্ছে না।

এ সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, সদর হাসপাতালসহ জেলায় ১৫৯টি চিকিৎসকের পদের মধ্যে আছে ৪৩ জন। চিকিৎসক সংকটের কথা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু উল্টো আরো তিনজনকে বদলি করা হয়েছে।

সুত্র:বণিক বার্তা,নভেম্বর ০৮, ২০১৭

The post চিকিৎসক সংকটে ভেঙে পড়ছে কুড়িগ্রামের স্বাস্থ্যসেবা appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
ডিসেম্বরেই চালু হচ্ছে দ্বিতীয় ধরলা সেতু https://www.ulipur.com/?p=4636 Wed, 25 Oct 2017 18:13:51 +0000 http://www.ulipur.com/?p=4636 নিউজ ডেস্কঃ চলতি বছরের ডিসেম্বরেই চালু হচ্ছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কুলাঘাটের ধরলা নদীর ওপর নির্মাণাধীন দ্বিতীয় ধরলা সেতু। ইতোমধ্যে সেতুটির শেষ স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) অধীনে বাস্তবায়নাধীন ৯৫০ মিটার পিসি গার্ডারের এই সেতুর ৯৫ ভাগের বেশি কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ শেষ করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই [...]

The post ডিসেম্বরেই চালু হচ্ছে দ্বিতীয় ধরলা সেতু appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
নিউজ ডেস্কঃ
চলতি বছরের ডিসেম্বরেই চালু হচ্ছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কুলাঘাটের ধরলা নদীর ওপর নির্মাণাধীন দ্বিতীয় ধরলা সেতু। ইতোমধ্যে সেতুটির শেষ স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) অধীনে বাস্তবায়নাধীন ৯৫০ মিটার পিসি গার্ডারের এই সেতুর ৯৫ ভাগের বেশি কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ শেষ করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। কুড়িগ্রাম এলজিইডি সূত্রে এসব তথ্য জানিয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এলজিইডির অধীনে দ্বিতীয় ধরলা সেতুটি নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে সিমপ্লেক্স ও নাভানা কনস্ট্রাকশন গ্রুপের সঙ্গে যৌথ চুক্তি সম্পাদিত হয় ২০১৪ সালে। চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর শেষ স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়। এখন মূল সেতুর রেলিং স্থাপনের কাজ শেষ হলেই এ বছরের যে কোনও দিন সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম এলজিইডি সূত্র জানায়, নদী শাসন, অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ ও মূল সেতুর জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১৯১ কোটি ৬৩ লাখ ২২৩ টাকা ৫৮ পয়সা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত জনগুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প ছিল এই সেতু। প্রকল্পটির উদ্বোধন হলে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার জনগণ, বিশেষ করে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার মানুষ বেশি উপকৃত হবেন। বিভাগীয় শহর রংপুরসহ দেশের সঙ্গে দেশের উত্তর-পশ্চিমের এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ অনেক সহজ হবে।

সূত্র আরও জানায়, দ্বিতীয় ধরলা সেতুটি পণ্য পরিবহনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেতুটি দিয়ে যান চলাচল শুরু করলে ভুরুঙ্গামারীর বঙ্গসোনাহাট স্থলবন্দরের মালামাল পরিবহন অনেক সহজ হবে। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার কৃষিজাত পণ্য পরিবহনে জটিলতাও কমবে। এছাড়া বঙ্গসোনাহাট স্থলবন্দর হয়ে ফুলবাড়ীর দ্বিতীয় ধরলা সেতু দিয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেভেন সিস্টারস (আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা ও অরুণাচল) রাজ্যগুলোর সঙ্গে পণ্য পরিবহনের ব্যয়ও কমবে বহুলাংশে। এসব রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংরাবান্ধা হয়ে কলকাতার যোগাযোগও অনেক সহজ হবে।

ফুলবাড়ী উপজেলার মিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান, ফুলবাড়ী সদরের আবেদ আলীসহ স্থানীয়রা জানান, বর্তমান সরকারের গৃহিত এ প্রকল্প ধরলা পারের এ উপজেলাসহ উত্তর ধরলার মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। সেতুটি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে, যা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেবে।

ফুলবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ সেতু প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুগ্রহের ফসল। তিনি বিশেষ নজর না দিলে মাত্র তিন বছরে এত বড় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হতো না। তাকে (প্রধানমন্ত্রী) দিয়েই এই সেতুর উদ্বোধন করবো আমরা। এ এলাকার জনগণ প্রধানমন্ত্রীর জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বহুল প্রতীক্ষিত সেতুটি প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নেও ভূমিকা রাখবে।’

এলজিইডি কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুল আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেতুটির ৯৫ ভাগেরও বেশি অংশের কাজ শেষ হয়েছে। এখন সংযোগ সড়ক কার্পেটিংসহ ছোটখাটো কিছু কাজ বাকি রয়েছে, যা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা চলছে। আমরা আশা করছি, এ বছরের ডিসেম্বরের যে কোনও দিন যান চলাচলের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেতুটির উদ্বোধন করবেন। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’

সুত্রঃ banglatribune

The post ডিসেম্বরেই চালু হচ্ছে দ্বিতীয় ধরলা সেতু appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
সংকট ও সম্ভাবনার কুড়িগ্রাম https://www.ulipur.com/?p=3745 Sat, 27 May 2017 10:53:52 +0000 http://www.ulipur.com/?p=3745 অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকনঃ মঙ্গা মন্বন্তরের কথা উঠলেই দেশবাসীর সামনে যে নামটি প্রথম ভেসে ওঠে সেটি কুড়িগ্রাম। বাসন্তির জাল পরানো মিথ্যে ছবি ছাপিয়ে আমাদের কলঙ্কিত করা হয়েছে। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত মানুষগুলোর এপার-ওপার ছুটে বেড়ানোর করুণ কাহিনি অসত্য নয়। ভূলোক দোলানো কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর রক্তাক্ত লাশ আমাদের সে কষ্টগাথাকে ইতিহাসে ঠাঁই দিয়েছে। উত্তরের প্রান্তিক জেলা কুড়িগ্রাম। যার [...]

The post সংকট ও সম্ভাবনার কুড়িগ্রাম appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>
অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকনঃ
মঙ্গা মন্বন্তরের কথা উঠলেই দেশবাসীর সামনে যে নামটি প্রথম ভেসে ওঠে সেটি কুড়িগ্রাম। বাসন্তির জাল পরানো মিথ্যে ছবি ছাপিয়ে আমাদের কলঙ্কিত করা হয়েছে। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত মানুষগুলোর এপার-ওপার ছুটে বেড়ানোর করুণ কাহিনি অসত্য নয়। ভূলোক দোলানো কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর রক্তাক্ত লাশ আমাদের সে কষ্টগাথাকে ইতিহাসে ঠাঁই দিয়েছে।

উত্তরের প্রান্তিক জেলা কুড়িগ্রাম। যার রাজারহাট উপজেলা বাদ দিয়ে সব উপজেলার সঙ্গে ভারতীয় সীমান্ত। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সীমান্তে রয়েছে ভারতের মেঘালয়, আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গ। একটি জেলার মধ্যে ভারতের তিনটি প্রদেশ সেটি শুধু কুড়িগ্রামের সঙ্গেই রয়েছে, অন্যত্র নেই। ভৌগোলিক কারণে কুড়িগ্রাম বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে। কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে অসংখ্য নদ-নদী প্রবাহিত। যার অনেকগুলোই ভারত থেকে উৎসারিত। ভুবনখ্যাত ব্রহ্মপুত্র কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর দিয়ে প্রবেশ করেছে কুড়িগ্রাম। এছাড়া তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, জিঞ্জিরাম, সোনাভরি, সংকোশ, নীলকমল, কালজানিসহ অনেক নদীই প্রবাহিত। পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল ছিটমহল দাসিয়ারছড়া এখন কুড়িগ্রামের অংশ। একাত্তরে ৬ ও ১১নং সেক্টরের তুমুল যুদ্ধগুলো এই কুড়িগ্রামের বিভিন্ন অংশেই হয়েছে।

কুড়িগ্রামের মানুষজন এখনো দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই করছে। দারিদ্র্যের ভর নিয়ে কুড়িগ্রাম এখনো শীর্ষেই আছে। কুড়িগ্রামের দরিদ্রতার হার ৬৩%, যা দেশে সর্বোচ্চ। সরকার দেশকে মধ্য আয়ের স্তরে নিতে দৃঢ়তার সঙ্গে লড়ছে। কুড়িগ্রামের এই পরিসংখ্যান যদি অব্যাহত থাকে তাহলে মধ্যস্তরে যেতে দেশকে আরো অপেক্ষা করতে হবে। কুড়িগ্রামকে বাদ দিয়ে যেহেতু বাংলাদেশ নয়। সঙ্গতকারণে দারিদ্র্যমুক্তি কুড়িগ্রামকে নিয়েই করতে হবে। দারিদ্র্যবিমোচন কঠিন বিষয় নয়। স্থানীয় সম্পদ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগালে কুড়িগ্রামের দারিদ্র্যমুক্তি সহজ হবে। জেলার বিপুল ভূমি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ধরে এগোতে পারলে দারিদ্র্যবিমোচন দ্রুতই সম্ভব। কুড়িগ্রামের উন্নয়নের জন্য খাতওয়ারি কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরছি, যেগুলো করতে পারলে দ্রুতই বদলে যাবে দারিদ্র্যের মানচিত্র।

যোগাযোগ ও বাণিজ্যঃ
বর্তমান সময়ে ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখনো যাত্রী পারাপার শুরু না হলেও পণ্য আমদানি-রফতানিতে বেশ সাড়া ফেলেছে। আন্তর্জাতিক এই পথটি চালু হওয়ায় পাথর ও কয়লা আমদানি খুবই সাশ্রয়ী হয়েছে। এই বন্দরের সবচেয়ে বড় সুবিধা, বন্দরটি ভারতীয় মহাসড়কের সঙ্গেই, যা অন্য স্থলবন্দরগুলো থেকে পৃথক। এই রুটকে ধরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আরো সম্প্রসারিত হতে পারে। এই রুটে পণ্য পরিবহন ও যাত্রী যাতায়াত দ্রুত চালু করতে যা করা প্রয়োজনÑ এখানে সোনাহাট ব্রিজ নির্মাণ করা, ফোর লেন সড়ক তৈরি করা এবং রাস্তাটি তৃতীয় তিস্তা সেতু চিলমারী পয়েন্টে যুক্ত করা। বন্ধ হয়ে থাকা জয়মনিরহাট ইমিগ্রেশন চালু করা। সোনাহাট থেকে রেল ব্যবস্থা চালু করা। রৌমারী আন্তর্জাতিক স্থলবন্দরের সঙ্গে ফোর লেন সড়ক নির্মাণ করা এবং দেওয়ানগঞ্জ সীমানা থেকে রেললাইন সম্প্রসারণ করে রৌমারী বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করা। ধরলা নদীর কারণে বহুদিন ধরে মোগলহাট স্থলবন্দরটি বন্ধ। বিশেষত ভারতীয় অংশে গীতালদহ রেলব্রিজটি অকার্যকর হওয়ায় বন্দরটি বন্ধ, সেটি চালু করা। বর্তমান সময়ে মোগলহাট ও গীতলদহের সামান্য দূরে ধরলা নদীর ওপর কুলাঘাটে একটি বৃহৎ ব্রিজের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। এই ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ করে দিনহাটার সঙ্গে সাবেক রংপুর রোডটি চালু করা। এটি চালু করলে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ শুধু বৃদ্ধিই পাবে না, বরং দূরত্ব কমে এসে সেটি অর্থ ও সময় সাশ্রয়ী হবে। এই রুটে কোচবিহার ১২৭ কিলোমিটার ও ভুটানের দূরত্ব অর্ধেকের বেশি কমে আসবে। এখানে রেলপথে খরচ কমবে ৬২% থেকে ৬৭%, সড়ক পথে ব্যয় কমবে ৫৫-৬০%। একইসঙ্গে যদি ব্রহ্মপুত্রের ওপর যাত্রাপর মোল্লারহাট অথবা ফকিরের হাট পয়েন্টে ব্রিজ হয় তা রাজধানীর সঙ্গে শুধু দূরত্বই কমাবে না, বরং এই সড়কপথ সোনাহাট, মোগলহাট এবং বুড়িমারী স্থলবন্দরকে যুক্ত করে মহাদেশীয় যোগাযোগকে নিশ্চিত করবে। একইসঙ্গে জেলা শহরের সঙ্গে রৌমারী-রাজিবপুরের সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত হবে। নদী শাসনসহ ব্রহ্মপুত্রের দুই ধার ধরে স্থায়ী বাঁধ বনাম মহাসড়ক নির্মাণ করতে হবে।

নৌবন্দর ও নৌযোগাযোগঃ
জেলার ব্রহ্মপুত্র নদকে ঘিরে ব্রিটিশ আমলে চিলমারী, নুনখাওয়া, যাত্রাপুরে নৌবন্দর ছিল। পাকিস্তান আমলেও এর ব্যাপক ব্যবহার ছিল। বর্তমানে এই নৌবন্দরগুলো অচল প্রায়। আগে কলকাতা থেকে মাল বোঝাই জাহাজ নিয়মিত আসামে যেত। চিলমারী ও যাত্রাপুরে কাস্টম ডিউটি দিতে হতো। এখন নদীর নাব্যতা না থাকায় জাহাজ চলাচল নেই। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে পারলে আসামের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রফতানি সহজ ও সাশ্রয়ী হবে। সোনাহাট বন্দরকে ধরে ভূরুঙ্গামারীতে দুধকুমার নদীতে সোনাহাট ব্রিজের কাছে বন্দর গড়ে তুলতে পারলে খুবই কম খরচে আমদানি-রফতানি সম্ভব হবে। এতে বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠী কর্মেরও সুযোগ পাবেন। রৌমারী রাজিবপুরের জন্য অতি দ্রুত ফেরি ও স্পিড বোট সার্ভিস চালু করা।

ট্রেন সার্ভিসঃ
ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব পাড়ের রৌমারী, রাজিবপুর, চিলমারী ও উলিপুরের অংশের যাত্রী বাদ দিয়েই কুড়িগ্রামের অবশিষ্ট এলাকার মানুষ প্রতিরাতে প্রায় একশ’ পঞ্চশটি কোচে ঢাকায় যায়। প্রায় দশ হাজার মানুষ কাজের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন কুড়িগ্রাম ছাড়ে। এরাই কুড়িগ্রামের রেমিট্যান্সদাতা। এদের বড় অংশই টাকার অভাবে বাসের ছাদে কিংবা বাসের ভিতর দাঁড়িয়ে ৫০-১০০ টাকায় ঢাকা যায়। এই বিপুল সংখ্যক যাত্রীর জন্য চিলমারী থেকে আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালু হলে গরিব মানুষের প্রকৃতই উপকার সাধন হবে। একই সঙ্গে রংপুরের সঙ্গে প্রতি ঘণ্টায় ডেমু ট্রেন সার্ভিস চালু করাও প্রয়োজন।

শিল্পায়নঃ
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত কুড়িগ্রাম শিল্পাঞ্চল দ্রুত গড়ে তোলা। শুধু তাই নয়, কুড়িগ্রামের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ভারত থেকে যেসব পণ্য শিল্পের জন্য আমদানি করা হয় তা দিয়ে এখানে শিল্প গড়ে তোলা যায়। যারা কুড়িগ্রামে শিল্প গড়ে তুলবেন তাদের কর ও ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা করা। কারণ সামর্থ্যবানরা দূরত্ব ও পশ্চাৎপদ এলাকার কারণে ঝুঁকি নিয়ে শিল্প করতে আগ্রহী নয়। এসব সুবিধা শিল্পোদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে আগ্রহী করবে। বকসীগঞ্জ থেকে ত্রিশ কিলোমিটার উত্তরে এগোলেই রৌমারী, সেখান থেকে গ্যাস এনে রৌমারীতে শিল্প গড়ে তোলা যায়। সেখানেও পৃথক অর্থনৈতিক জোন হতে পারে। এতে রৌমারী ও কামালপুর স্থলবন্দর সহায়তা পেতে পারে। ব্রহ্মপুত্রে চিলমারী এলাকায় যে মূল্যবান বালু পাওয়া গিয়েছে তা উত্তোলন করা যায়।

কৃষিনির্ভর শিল্পঃ
জেলার উৎপাদিত পণ্যভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা। মৌসুমি তথা রবিশস্য সংরক্ষণের সবজি হিমাগার, আলু ও ভুট্টাভিত্তিক শিল্প স্থাপন করা।

শিক্ষাক্ষেত্রঃ
মাদ্রাসার সংখ্যাগত দিক ছাড়া শিক্ষার সব ক্ষেত্রে কুড়িগ্রাম পিছিয়ে আছে। জেলার চরাঞ্চলের শিক্ষা পরিস্থিতি আরো করুণ। সেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো মূলতই প্রাথমিক ও কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক। মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে। চরাঞ্চলের স্কুলগুলোর শিক্ষকরা মূলত শহরের বাসিন্দা। তারা স্কুলে উপস্থিতি ও পাঠদানে নিয়মিত নন। তারা শিক্ষা অফিসগুলোর সঙ্গে যোগসাজশে নিয়মিত অনিয়ম করেই চলেন। যেসব শিক্ষক নিয়মিত যান না তারা গ্রামের কোনো অর্ধ শিক্ষিত যুবককে মাসে ৫০০-১০০০ টাকায় চুক্তি দিয়ে পড়িয়ে নেন। স্কুলের বেতনের আগে কোনো একদিন স্কুলে গিয়ে হাজিরায় সব দিনের স্বাক্ষর করেন। বলার কেউ নেই, কেউ বললেও কাজে দেয় না, কারণ ওই স্কুলশিক্ষকদের কেউ কেউ ক্ষমতাসীন দলসহ বড় দলগুলোর জেলা পর্যায়ের নেতাও বটে। যিনি তাদের ধরবেন তিনি উল্টো সাজা পেয়ে বদলি হয়ে যাবেন। এই পরিস্থিতির বদল না হলে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে যে সুযোগ সরকার দিয়েছে তার সবই ব্যর্থ হবে। এই যে চলমান বন্যা, এখন এক-দুই মাস স্কুল হবে না। এটি পুষিয়ে নিতে চরাঞ্চলের স্কুল ক্যালেন্ডার পৃথক করতে হবে। যারা চরে চাকরি করবেন তাদের হিল অ্যালাউন্সের মতন চর অ্যালাউন্স চালু করতে হবে। যারা প্রকৃত অর্থেই চরে থাকবেন তারাই শুধু এটি পাবেন। এর বাইরে চরাঞ্চলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল বোট চালু করতে হবে। মিড ডে মিল তথা স্কুল ফিডিং চালু করা যেতে পারে।

কুড়িগ্রাম জেলা শহরে অবস্থিত জেলার সবচেয়ে শিক্ষার্থীবহুল মজিদা কলেজসহ প্রত্যেকটি উপজেলার সেরা কলেজগুলোকে সরকারিকরণ করা প্রয়োজন। মাদ্রাসাগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত বিশ^বিদ্যালয়ের কাজ দ্রুত শুরু করা। জেলা সদরে ধরলার তীরে একটি শিশুপার্ক এবং প্রত্যেকটি উপজেলায় শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা। রৌমারী রাজিবপুরের মানুষের ছোট ছোট মামলা পরিচালনার জন্য রৌমারীতে একটি আইনি চৌকি বা আদালতব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা উচিত। এতে মানুষের হয়রানি কমবে।

ছিটমহলঃ
জেলার অধীনে ভারতীয় ১২টি ছিলমহল যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও জনবহুল ছিটমহল দাসিয়ারছড়া। এই ছিটমহলগুলোর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজর আছে। তবে এখনো সরকারি উদ্যোগে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। সেখানে শিক্ষা ও চাকরিতে সুযোগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দরকার।

জেলার জন্য পৃথক উন্নয়ন বরাদ্দঃ
দেশের অন্য জেলাগুলোর চেয়ে বিভিন্ন খাতে কুড়িগ্রাম অনেক পিছিয়ে আছে। এই পশ্চাৎপদতা দূর করতে ব্যাপক বরাদ্দ ও ভর্তুকি দরকার। অন্য জেলার সঙ্গে সম-বরাদ্দে সেটি সম্ভব নয়। এগিয়ে নিতে ব্যাপক বরাদ্দের বিকল্প নেই।

কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ দেশের অন্য জেলার মানুষের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে, তাদের জীবনে দারিদ্র্য থাকলেও তারা ভিক্ষুক নয়। দেশে বিশেষত ঢাকাসহ বড় বড় শহরে যারা ভিক্ষা করে তাদের মধ্যে কুড়িগ্রামের নাগরিক নেই বললেই চলে। চিত্রটি কাল্পনিক নয়, ভিক্ষুকদের জিজ্ঞেস করলে আরো পরিষ্কার হওয়া যাবে। শিল্পাঞ্চল, গার্মেন্টস শিল্প, শহরগুলোর বাসা-বাড়ির কাজের লোকদের ঠিকুজির খোঁজ করলে একটি বড় অংশই পাওয়া যাবে তারা কুড়িগ্রামের। এই চিত্রটি আমাদের সক্ষমতার চিত্র, অক্ষমতার নয়। রাষ্ট্র যদি কুড়িগ্রামের নাগরিকদের এই সক্ষমতাকে বিবেচনা করে এখানে দ্রুত শিল্পায়ন করে তবে সেটি একা কুড়িগ্রামের উপকার করবে না, বরং বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয় এবং ২০৪১-এর মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্তরে যেতে বাস্তবমুখী পরিকল্পনার জন্যও সহায়ক হবে। নতুবা দেশ যতই উন্নত হোক কুড়িগ্রাম কিন্তু দেশের কলঙ্ক তিলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।

লেখকঃ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। সাবেক রাকসু নেতা। সভাপতি, কুড়িগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি।
ইমেইলঃ abrahamlincoln66@gmail.com

The post সংকট ও সম্ভাবনার কুড়িগ্রাম appeared first on স্থানীয় খবরের ডিজিটাল মুখপত্র.

]]>