।। নিউজ ডেস্ক ।।
টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে উলিপুরে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের নিচু জায়গাগুলো তলিয়ে গেছে। এতে করে চরের বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানান, এ বছর ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর বিভিন্ন চরে ১৫০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। অসময়ে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে প্রায় ২৫ হেক্টর জমির বোরো ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। কিন্তু ক্রমাগত ধীরে ধীরে পানি বৃদ্ধির ফলে বাকি ক্ষেতগুলো পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে কৃষকরা তাদের কষ্টার্জিত কাঁচা ও আধা পাকা ধান ক্ষেত কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। পানি বৃদ্ধির ফলে ১৫ হেক্টর জমির পিয়াজ ও প্রায় ৭০ হেক্টর জমির তরমুজ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়াও বাদাম,কালিজিরা, তিশির ক্ষেতও তলিয়ে গেছে। এতে করে কৃষকরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বজরা ইউনিয়নের চর বগলাকুড়ার কৃষক রবিউল ইসলাম ২ একর জমিতে পিয়াজ চাষাবাদ করেছেন। সময়মত হারভেস্ট করতে পারলে অনেকটা লাভবান হতে পারতেন তিনি। কিন্ত হঠাৎ নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে এ স্বপ্ন গুরেবালি। রবিউল ইসলাম বলেন, চৈত্র মাস শেষে হলেই ২ একর জমিতে তার ৩০০ মণ পিয়াজ ঘরে উঠত। কিন্ত পানি বাড়ার কারণে সেটা আর সম্ভব হল না। এখন ১২০-১৩০ মণ পিয়াজ হতে পারে। কিন্ত সেটাও ঘরে রাখার মত না। এখনি সেসব বিক্রি করে দিতে হবে, নয়তো পঁচে যাবে। এতে চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি। একই কথা জানালেন, পিয়াজ চাষি গোলাম রব্বানী, জোবেদ আলী, গোলাম মোস্তফা।
উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চর বাগুয়া অনন্তপুরে গিয়ে দেখা যায় নদের পানি বাড়ার কারণে কেউ হাটু পানি কেউবা কোমর পানিতে বোরো ধান ক্ষেত কাটতে শুরু করছেন। এসময় কৃষক শামসুল হক, অছিমুদ্দিন, জহুরুল, শহিদুল ইসলামসহ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, এখন নদের পানি বাড়ার কথা না। কিন্ত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। এখনও ধান গাছে (দানা) চাল হয়নি তবুও গাছগুলো কেটে নিচ্ছি। এগুলো খড় হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
আফতাব গঞ্জের কৃষক নজর আলী জানান, ৫০ শতক জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছি। হঠাৎ পানি বৃদ্ধির ফলে সেসব তলিয়ে গেছে। আর কয়েকটা দিন থাকলে ধান পাওয়া যেত। অন্যান্য ধানের তুলনায় স্থানীয়ভাবে এই ধানের চাহিদা অনেক দামও ভাল পাওয়া যায়।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকতা সাজেদুল করিম বলেন, বোরো ধানগুলো সাধারণত চরের নিচু জমিতে রোপন করা হয়। বুড়াবুড়ি বেগমগঞ্জ হাতিয়া ইউনিয়ন এসব নিচু এলাকা। ভারতের পানি এসব এলাকায় দ্রুত ঢুকে পড়ার কারণে বোরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সবুর জানান, চলতি সপ্তাহে হালকা মাঝারি ও বর্জসহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ১০ হেক্টর বোরো ধান ও ১৫ হেক্টর জমির পিয়াজ কৃষক হারভেস্ট করেছে।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/এপ্রিল/০৯/২২